এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির ছিল: ওবায়দুল কাদের
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত ছিল বেশ আনন্দের। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মানুষ স্বস্তির সঙ্গেই বাড়ি গিয়ে ঈদ করতে পেরেছে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ঈদ-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ঈদযাত্রা ও সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা দেশের মানুষ বেশ স্বস্তির সঙ্গে ঈদ ও কোরবানি করেছেন। শুধু উত্তরবঙ্গের একটি সড়কে ঘরমুখো মানুষের জন্য কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। এটার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ঈদের সময় ৬ থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত দুর্ঘটনায় ৪৬ জন মানুষ মারা গেছেন। এর আগে অন্যান্য সময় ঈদের প্রাক্কালে প্রাণহানির সংখ্যা আরো বেশি ছিল। আমরা বর্তমানে এ সংখ্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে আরো কমে আসবে। সড়ক দুর্ঘটনায় একজন মানুষেরও মৃত্যু হোক, আমরা তা চাই না। ওবায়দুল কাদের বলেন, আবহাওয়ার কারণে ফেরি চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের যাতায়াতেও কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এখানে কারো হাত ছিল না। রাস্তা খারাপের কারণে কোথাও কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীসাধারণের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণের জন্য বিআরটিসি অতিরিক্ত এক হাজার ১৪৩টি বাসের মাধ্যমে তাদের সেবা দিয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ খুব একটি বেশি পাওয়া যায়নি। যেখানেই অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেখানেই মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে ৩৮১টি মামলা হয়েছে। সাত লাখ ৬৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চারলেনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত উত্তরের পথে ভোগান্তির অবসান হবে না বলে জানান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে আপাতত সহনীয় রাখতে নলকাসহ দু’টি ব্রিজের সংস্কার ও ‘সিরিয়াসলি’ বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। কাদের বলেন, এবারের ঈদযাত্রা মোটামুটি স্বস্তিদায়ক হয়েছে। তবে একটা রুট দু’দিন খুবই দুর্ভোগের কারণ হয়েছিল। সড়কে এবং টার্মিনালেও অপেক্ষমাণ যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হয়েছিল টাঙ্গাইল রুটে। এখানে সমস্যাটি হচ্ছে, যেটি আগে ঢাকা-চট্টগ্রামে ছিল। আমরা এবারের ভুল থেকে ভবিষ্যতে শিক্ষা নেবো। এ ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধে চারলেন হওয়ার আগে সেটা করবো। এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এবং আমরা সিরিয়াসলি বিষয়টা দেখছি। মন্ত্রী বলেন, উত্তরবঙ্গে এমনিতেই গার্মেন্টসকর্মীসহ শেষ দিকে ভিড়টা এমন যে তখন চাপ মোকাবিলা করা খুব কঠিন। চারলেন থেকে যখন দুই লেনে চাপটা যায় তখন লম্বা টেইলব্যাক সৃষ্টি হয় এবং টেইলব্যাকটা আরও লম্বা হয় যখন ধৈর্যহারা হয়ে চালকরা গাড়ি উল্টোপথে নিয়ে যায়। যে কারণে দু’দিন যাত্রাটা স্বস্তিদায়ক ছিল না, ভোগান্তি হয়েছে। অনেক মানুষ কষ্ট করেছেন। গাড়ি দেরিতে আসার কারণে টার্মিনালেও বহু মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছি। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামে নিয়মিত নির্ধারিত সময়েই গাড়ি পৌঁছেছে এবং সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টায় চট্টগাম যাত্রা- এটা ইতিহাসে প্রথম ছিল। ঢাকা-সিলেটও ভালো ছিল, ভুলতা ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহেও আমরা যতটা খারাপ হবে ভেবেছিলাম সেটা হয়নি। ঢাকা-ময়মনসিংহে স্বস্তিদায়ক ছিল। দক্ষিণাঞ্চলে ফেরির জন্য সংকট ছিল; পদ্মা-যমুনার তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। যে কারণে উভয়পাড়ে লম্বা টেইলব্যাকের সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেক মানুষের কষ্ট হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জের সমস্যাটা অনেক চেষ্টা করেও এড়াতে পারিনি। এখন এলেঙ্গা থেকে রংপুর চারলেনের কাজ শুরু হবে। সেখানে সাসেক প্রজেক্টে চারলেন হবে। ওই চারলেন শেষ পর্যন্ত পঞ্চগড় ও বুড়িমারী পর্যন্ত যাবে। এটার ফিজিবিলিটি এডিবি করেছে। উত্তরের মানুষ এ সুবিধাটা কবে পাবে- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে পাবে। এখন ঢাকা-এলেঙ্গা চারলেন হয়ে গেলো। যখন এলেঙ্গা-রংপুর চারলেনের কাজটা শেষ হবে তখন উত্তরবঙ্গের মানুষ আরও স্বস্তি পাবে এবং ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো স্বস্তিদায়ক হবে। কাজেই যতদিন না চারলেনের কাজটা শেষ না হচ্ছে এলেঙ্গা থেকে রংপুর, ততদিন পর্যন্ত এ দুর্ভোগ পোহাতে হবে এবং ভোগান্তির অবসান হবে না- এটাই স্বাভাবিক। এত দীর্ঘ সময়- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা কি ঢাকা-চট্টগ্রামে অপেক্ষা করিনি। এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম আর কখনও দুর্ভোগ হবে এটা চিন্তাও করছি না। আমি আশা করি আমাদের ওদিকে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। কাদের বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যাটি হয় নলকা ব্রিজে। এখানে বেশি টেইলব্যাকের সৃষ্টি হয়। ব্রিজটি যেহেতু অপ্রশস্ত। সেটাকে প্রশস্ত করা এবং আরও একটি ব্রিজ আছে যেটাকে বেইলি ব্রিজ করে আপাতত সমাধান খুঁজতে হবে। ইঞ্জিনিয়াররা এটা পরীক্ষা করে দেখছেন, কীভাবে সেখানে দুর্ভোগ এড়ানো যায় সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাতে বোধহয় কিছু ফল পাবো, পেতে শুরু করবো। কাদের বলেন, ঈদে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩৬ হাজার ২০২টি গাড়ি চলাচল করেছে। তারপরেও জনদুর্ভোগটা মোটেও সহনীয় ছিল না, এটা আমি নিজেই স্বীকার করেছি। ৬-১৩ আগস্ট পর্যন্ত সড়কপথে দুর্ঘটনায় ৪৩টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গতবারের থেকে কম এবং প্রাণহানিও কম হয়েছে।
কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম কমার পেছনে ‘সিন্ডিকেটের কারসাজি’ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ওবায়দুল কাদের। সংবাদ সম্মেলনে চামড়া নিয়ে ‘সিন্ডিকেটের কারসাজির’ অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, চামড়ার ব্যাপারে বাস্তব চিত্রটা কী- তা ভালভাবে জানা নেই। নিরপেক্ষভাবে জানা দরকার সিন্ডিকেটের বিষয়টি। এরকম চক্র আমাদের দেশে আছে, ফয়দা লোটার জন্য সিন্ডিকেট করে। এ বিষয়টি (চামড়ার ক্ষেত্রে) হয়েছে কিনা তা খোঁজখবর নেওয়া হবে। এবার ঈদের দিন থেকেই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া কেনা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আসতে থাকে। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া থাকা টাকা দেননি- এই যুক্তি দেখিয়ে আড়তদাররা চামড়া কেনা বন্ধ রাখলে কাঁচা চামড়া নিয়ে ফড়িয়ারা বিপাকে পড়েন। দিনাজপুরে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বাজারে ফেলে চলে যান মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামেও লাখখানেক পশুর চামড়া সড়কে ফেলে দেওয়া হয়, পরে সেগুলো সরিয়ে মাটিচাপা দেয় সিটি করপোরেশন। এরইমধ্যে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী গত মঙ্গলবার অভিযোগ তোলেন- ক্ষমতাসীন দলের ‘সিন্ডিকেটের কারসাজিতে’ কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম কমিয়ে ‘পাশের দেশে পাচার’ করা হচ্ছে। বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদের পর মাত্র একদিন সময় গেল, এ সময়ে পুরো বিষয় মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। সব কিছু মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে বিষয়টি মূল্যায়ন করতে হবে। ঢালাও অভিযোগ করা বিএনপির ‘পুরনো অভ্যাস’ মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি কোনো সিন্ডিকেটের কারসাজি হয়ে থাকে, যিনি অভিযোগ করেছেন তিনি বলুন, তথ্য প্রমাণসহ বলতে হবে। তারা সব সময় নেতিবাচক বিষয়টাকে আকড়ে ধরে, সরকারের সামান্য কিছু পেলেই সেটাকে নিয়ে তারা ঢালাও বিষোদ্গার করে। এটি বিরোধী দলের ঢালাও বিষোদ্গার কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সংগ্রহ করা চামড়া যখন নষ্ট হচ্ছে, সরকার এ বিষয়ে কি করছে তা জানতে চান একজন সাংবাদিক। উত্তরে কাদের বলেন, সামগ্রিকভাবে অভিযোগগুলো পুরোপুরি খতিয়ে না দেখে কোনো রিমার্কস করা এখনো ঠিক হবে না, আরও দুই চারদিন যাক, এর মাধ্যমে সঠিক চিত্রটি খুঁজে বের করতে পারব। এর পেছনে ‘অপরাধমূলক’ কোনো কাজ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অফেন্স অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যায় যেই করুক, অপরাধ যেই করুক, এখানে জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থ বিঘ্নিত হলে, জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হলে তা দেখা সরকারের দায়িত্ব। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার ইতোমধ্যে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে মানুষ যে দাম পাচ্ছে, সেটা ‘যৌক্তিক না’। মানুষ যেন ন্যায্য দাম পায় তা নিশ্চিত করতেই সরকারের এ পদক্ষেপ। চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ট্যানারি মালিক ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদকরা ক্ষতির আশঙ্কায় সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।